"শ্রীশ্রী সরস্বতী "
"ওম সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।বিদ্যারূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোস্তু তে || "
ঈশ্বরের জ্ঞান শক্তির নাম সরস্বতী ।
শাস্ত্রানুযায়ী,দেবী দূর্গা ও মহাদেবের কন্যা হলেন সরস্বতী। লক্ষ্মী–কার্তিক–গণেশের সহোদরা ভগ্নী। পর্বতরাজ হিমালয় হলেন সরস্বতীর দাদু। সরস্বতী সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার সহধর্মিণী, পালনকর্তা বিষ্ণুপত্নী লক্ষ্মী ও ধবংসকর্তা মহেশ্বরজায়া পার্বতীর সঙ্গে একযোগে “ত্রিদেবী” নামে পরিচিতা। এই ত্রিদেবীর কাজ হল ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবকে যথাক্রমে জগৎ সৃষ্টি, পালন ও ধ্বংস করতে সাহায্য করা ।পুরাণ অনুযায়ী দেবী সরস্বতী ব্রহ্মের মুখ থেকে উথ্থান। দেবীর সকল সৌন্দর্য্য ও দীপ্তির উৎস মূলত ব্রহ্মা। পঞ্চ মস্তকধারী দেবী ব্রহ্মা এক স্বকীয় নিদর্শন। পূজার জন্য দেবী সরস্বতীর মূর্তি শ্বেত বস্ত্র পরিধান করে থাকে যা পবিত্রতার নিদর্শন বলে পরিচিত। বিশ্বভূবন প্রকাশ সরস্বতীর জ্যোতিতে। হৃদয়ে সে আলোকবর্তিকা যখন প্রজ্বলিত হয়, তখন জমাট বাধা অজ্ঞানতারূপ অন্ধকার চলে যায় ।অন্তরে, বাইরে সর্বত্র তখন জ্বলতে থাকে জ্ঞানের পুণ্য জ্যোতি। এই জ্যোতিজ্ঞানই ব্রহ্মজ্ঞান, এই জ্যোতিই সরস্বতী। আলোকময়ী, তাই তিনি সর্বশুক্লা ।
সরস্বতী মূলত বৈদিক দেবী। বেদে সরস্বতী প্রধানত নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সরস শব্দের অর্থ জল। অতএব সরস্বতী শব্দের আদি অর্থ হলো জলবতী অর্থাৎ নদী।তিন গুণের মধ্যে তিনি সত্ত্বগুণময়ী, অনন্ত জ্ঞানময় ঈশ্বরের বাক্শক্তির প্রতীক বাগ্দেবী। গতিময় জ্ঞানের জন্যই ঋগ্বেদে তাঁকে নদীরূপা কল্পনা করা হয়েছে, যিনি প্রবাহরূপে কর্মের দ্বারা মহার্ণব বা অনন্ত সমুদ্রে মিলিত হয়েছেন। কল্যাণময়ী নদীতটে সাম গায়কেরা বেদমন্ত্র উচ্চারণে ও সাধনে নিমগ্ন হতো ।বৃহস্পতি হচ্ছেন জ্ঞানের দেবতা, বৃহস্পতি পত্নী সরস্বতীও জ্ঞানের দেবী হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে সরস্বতী কেবল জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবীতে পর্যবসিত হলেন। পণ্ডিতরা অনেকেই মনে করেন যে সরস্বতী প্রথমে ছিলেন নদী, পরে দেবী হয়েছেন। “আর্য্যাবর্তে সরস্বতী নামে যে নদী আছে তাই প্রথমে দেবী বলে পূজিত হয়েছিলেন।” প্রতিমাকল্পে দেবী সরস্বতীকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেত পদ্মে আসীনা, মুক্তার হারে ভুষিতা, পদ্মলোচনা ও বীণা পুস্তকধারিণী এক দিব্য নারী মূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে। হাতে বীণা থাকায় তিনি বীণাপাণি । এছাড়াও তিনি শ্রুতদেবী নামেও কথিত হন।দেবীর বাহন হাঁস।
সরস্বতী ক্ষেত্রভেদে দ্বিভূজা অথবা চতুর্ভূজা এবং মরালবাহনা অথবা ময়ূর বাহনা। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূর বাহনা চতুর্ভূজা সরস্বতী পূজিত হন। বাংগালী তথা পৃথিবীর বিভিন্ন স্হানে বসবাসরত বাংলা ভাষাভাষি হিন্দুরা সরস্বতী দ্বিভূজা শ্বেত পদ্মে তাঁর আসন ও শুভ্র রাজহংস বাহন এ প্রতিমায় পূজোর আয়োজন করেন ।
সরস্বতী বিদ্যাদেবী, জ্ঞানদায়িনী, বীণাপাণি, কুলপ্রিয়া, পলাশপ্রিয়া বাগদেবী, সারদা, শতরূপা, মহাশ্বেতা, ভারতী প্রভৃতি নামে অভিহিতা।
রাজহংস কেন সরস্বতীর বাহন? কেননা জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে সর্বত্রই হাঁসের সমান গতি, যেমন জ্ঞানময় পরমাত্মা সর্বব্যাপী - স্থলে, অনলে, অনিলে সর্বত্র তাঁর সমান প্রকাশ। হংস জল ও দুধের পার্থক্য করতে সক্ষম। জল ও দুগ্ধ মিশ্রিত থাকলে হাঁস শুধু সারবস্তু দুগ্ধ বা ক্ষীরটুকুই গ্রহণ করে, জল পড়ে থাকে। জ্ঞান সাধনার ক্ষেত্রেও হংসের এ স্বভাব তাৎপর্য বহন করে।
সংসারে নিত্য ও অনিত্য দুটি বস্তুই বিদ্যমান। বিবেক বিচার দ্বারা নিত্য বস্তুর বিদ্যমানতা স্বীকার করে তা গ্রহণ শ্রেয়, অসার বা অনিত্য বস্তু সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য। হাঁস জলে বিচরণ করে কিন্তু তার দেহে জল লাগে না। মহাবিদ্যা প্রতিটি জীবের মধ্যে থেকেও জীবদেহের কোন কিছুতে তাঁর আসক্তি নেই, তিনি নির্লিপ্তা।
সরস্বতীর হাতে থাকে বীণা; এর কারণ হচ্ছে-হিন্দু ধর্ম হলো নাচ, গান সমৃদ্ধ শিল্পকলার ধর্ম; যা সামাজিক বাস্তবতাকে এর মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে বিকশিত করে ।কারণ, প্রত্যেক ছেলে মেয়েই কোনো না কোনো প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহন করে।প্রকৃতির ধর্ম হিসেবে হিন্দু ধর্ম এই সামাজিক বাস্তবতাকে স্বীকার করে, এই কারণেই দেবী সরস্বতীর হাতের বীণা হচ্ছে সেই শিল্পকলার প্রতীক। শিল্পকলার সাথে যাঁরা জড়িত থাকেন সাধারণত তাঁরা সৎ প্রকৃতির, সজ্জন ও সমাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকেন ফলে সমাজের সুফল বয়ে আনেন ।
সরসস্বতীর হাতে থাকে পুস্তক এবং সরস্বতী পূজাতেও বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক দিতে হয়। পুস্তক হচ্ছে জ্ঞানের আশ্রয়, একটি জ্ঞান পিপাসু এবং জ্ঞান সমৃদ্ধ জাতি পরিবার ,সমাজ,দেশ তথা পৃথিবীর সকল প্রান্তে সমাদৃত ।
অনেক কাঠামোতে দেখা যায়, সরস্বতী দেবী হাঁসের উপর বসে আছেন আবার কোনো কাঠামোয় দেখা যায় শ্বেত পদ্মফুলের উপর আসীন ।পূর্ণ প্রস্ফুটিত পদ্মফুল হলো সফল ও সমৃদ্ধ জীবনের প্রতীক ।এক কথায় ফুলের বিকাশের সাথে মানুষের জীবনের বিকাশকে তুলনা করা হয়েছে। পূর্ণ বিকশিত একটি পদ্মফুলের উপর সরস্বতীর বসে থাকার অর্থ হলো
এ আদর্শকে লালন করে নিজের জীবনকে বিকশিত করতে পারলে সেই জীবনও ফুলের মতোই পবিত্র, সুন্দর, বিকশিত ও সমৃদ্ধ হবে ।
মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে দেবীর পুজো করা হয়। তিথিটি বসন্ত পঞ্চমী বা শ্রীপঞ্চমী নামেও পরিচিত।সরস্বতী পুজোর দিন একদম ছোটো শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতর্পণের প্রথাও প্রচলিত।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গৃহ ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবীর পূজা করা হয়।
আসছে ৫ই ফেব্রুয়ারি ,২০২২ শনিবার
শ্রীশ্রীসরস্বতী পূজা।সরকারী আদেশানুযায়ী ঐ দিন মন্দিরে ভক্তগনের প্রবেশের অনুমতি না থাকার কারনে পরবর্তীতে ১২-০২-২২(শনিবার) বিকাল ৪টা হতে সন্ধ্যা ৭টা পযর্ন্ত (সরস্বতী পূজার)সন্মিলিত পুস্পান্জলি প্রদানের ব্যবস্হা থাকবে।

On 5th February, 2022 (Saturday) Sree Sree Saraswati puja will be held. As per Quebec Government rules, that day, devotees are not allowed for prayer. On 12-02-22, we are going to arrange devotee prayer/puspanjali(Saraswati)from 4pm to 7 pm.

Thanking you,

SANATAN DHARMA TEMPLE MANAGEMENT ??

6221 Boulevard Monk,Montreal, QC,CA.
Tel: 514-439-9133.
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram